ধর্ম

যুদ্ধে মুসলিম নারীদের অবদান

যুদ্ধে মুসলিম নারীদের অবদানযুদ্ধে মুসলিম নারীদের অবদান

ইতিহাসে মুসলিম নারীদের বহুমুখী‌ অবদানের কথা উল্লেখ আছে। পরিবার গোছানোর পাশাপাশি শিক্ষাদীক্ষা, চিকিৎসা ও যুদ্ধের‌ ক্ষেত্রে তাঁরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। যুগে যুগে বীরত্বের সোনালি অধ্যায়ে তাঁরা হিম্মত ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। জাতির প্রতি সহমর্মিতাবোধের অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।

গাফিলতি ও অলসতার চাদরে আবৃত সমকালীন নারীদের তাঁদের থেকে শিক্ষা নেওয়া বড় প্রয়োজন।

নারীদের উত্তম যুদ্ধ

 

ইসলামী আইন অনুযায়ী, সাধারণত নারীদের ওপর যুদ্ধ ফরজ নয়। তবে তাদের ওপর যুদ্ধ ফরজ হওয়াটা প্রেক্ষাপটনির্ভর ও শর্তসাপেক্ষ বিষয়। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে তাঁর সহধর্মিণীরা যুদ্ধের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, ‘(নারীদের জন্য) উত্তম যুদ্ধ হলো হজ।’ (বুখারি, হাদিস : ২৬৭৯)

যুদ্ধের জন্য দোয়ার আবেদন

ইসলামের প্রথম যুগে নারী সাহাবিরা সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। নারীদের যুদ্ধের অন্যতম প্রধান উদাহরণ মিলহানের কন্যা। তিনি সামুদ্রিক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে দোয়া নিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ২৬৮০)

স্ত্রীকে নিয়ে যুদ্ধে যাওয়া

আগের রাজা বা সেনাপতিরা বিশেষ বিশেষ নারীদের সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধে যেতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো যুদ্ধে যাওয়ার আগে তাঁর একজন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বাইরে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা করলে তিনি তাঁর সহধর্মিণীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতেন এবং এতে যার নাম আসত তাকেই রাসুলুল্লাহ (সা.) সঙ্গে নিয়ে যেতেন। কোনো এক যুদ্ধে এভাবে তিনি আমাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। তাতে আমার নাম এলো এবং আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বের হলাম। এ ছিল পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার পরের ঘটনা।
(বুখারি, হাদিস : ২৬৮১)

পুরুষদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ

উহুদ যুদ্ধে নারী সাহাবিরা অংশ গ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁরা আহত পুরুষ সাহাবিদের সেবা করা, তাঁদের পানি সরবরাহ করা ও চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আনাস (রা.) বলেন, উহুদের যুদ্ধে সাহাবিরা রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। আমি দেখলাম, আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা.)ও উম্মে সুলাইম (রা.) তাঁদের আঁচল এতটুকু উঠিয়ে নিয়েছেন যে আমি তাঁদের উভয় পায়ের অলংকার দেখছিলাম। তাঁরা উভয়েই মশক পিঠে বহন করে সাহাবিদের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। আবার ফিরে গিয়ে মশক ভর্তি করে নিয়ে এসে সাহাবিদের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ২৬৮২)

যুদ্ধের ময়দানে নারীদের অবদান

যুদ্ধের ময়দানে নারীরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।‌ তাঁদের যুদ্ধে অন্যতম কাজ ছিল আহত সৈন্যদের সেবা করা ও চিকিৎসা প্রদান। রুফাইদা বিনতে সাদ আল-আসলামিয়া (রা.) ছিলেন ইসলামের প্রথম নার্স ও চিকিৎসক। তাঁর অধীনে নারীদের একটি টিম পরিচালিত হতো। চিকিৎসাসেবায় নিবেদিত উম্মে আতিয়া (রা.), আয়েশা সিদ্দিকা (রা.), উম্মে সুলাইম (রা.), উম্মে উমারা (রা.), ফাতিমা (রা.) ও রুবাইয়্যি বিনতে মুআববিজ (রা.)-এর নাম উল্লেখযোগ্য। রুবাইয়্যি বিনতে মুআববিজ (রা.) বলেন, আমরা (যুদ্ধের ময়দানে) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে থাকতাম। আমরা লোকদের পানি পান করাতাম, আহতদের পরিচর্যা করতাম এবং নিহতদের মদিনায় পাঠাতাম। (বুখারি, হাদিস : ২৬৮৪)

Leave a Reply