প্রতিশ্রুত সময়ে বৈষম্য নিরসনে উদ্যোগ না নেওয়ায় শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে নাটোরে প্রাণ অ্যাগ্রো কোম্পানি লিমিটেডের কারখানা বন্ধ ঘোষাণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকেদের বেশির ভাগ দাবি মেনে নেওয়ার হলেও বেতন বৃদ্ধির দাবি না মানায় বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সদর উপজেলার একডালা এলাকায় প্রাণ অ্যাগ্রোর কারখানা তারা বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভকে ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুলসংখ্যক সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রাণ কারখানার ভেতরে অবস্থান নেন। এ সময় কারখানার সংবাদ সংগ্রহ করতে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রাণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। বিক্ষোভের মুখে বেতন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বৈষম্য দূর করতে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময় নেন প্রাণ কর্তৃপক্ষ। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বুধবারের ভেতর শ্রমিকদের সব দাবি-দাওয়া মেনে না নেওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রাণ অ্যাগ্রো কোম্পানি নাটোরের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হযরত আলীকে কারখানা থেকে বের হতে দেয়নি।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ নিরসনের চেষ্টা করলে শ্রমিকরা আরও বেশি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মাছুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন কারখানায় আসেন। তারা দীর্ঘ সময় কোম্পানির শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর সন্ধ্যার পরে অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া নিয়ে কোম্পানির এমডির সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসসহ সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানি বন্ধ থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে বিক্ষোভ বন্ধ করে ফিরে যান শ্রমিকরা। পরে রাত ৮ টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জিএম (ফ্যাক্টরি) হযরত আলীকে উদ্ধার করে কারখানার বাইরে নিয়ে যান।
মিতা খাতুন নামে আন্দোলনকারী এক নারী শ্রমিক বলেন, প্রাণ কোম্পানি আমাদেরকে কথা দিয়ে কথা রাখেনি। তারা বলেছিল বুধবারের ভেতর আমাদের সব দাবি মেনে নেবে। কিন্তু আমাদের প্রধান দাবি বেতন বৃদ্ধি (সর্বনিম্ন ১২ হাজার টাকা) তারা মেনে নেয়নি।
অন্য এক শ্রমিক আহসান বলেন, আমরা আমাদের দাবির কথা তুললেই বলে কোম্পানি বন্ধ করে দেব। এই হুমকিতে আমরা আর দমে যাব না। আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাছুদুর রহমান বলেন, খবর তাৎক্ষণিকভাবে আমরা কারখানা এসেছি। এখানে শ্রমিক এবং প্রাণ কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে এখানকার জিএম (ফ্যাক্টরি) হযরত আলীকে প্রত্যাহার করেছে প্রাণ কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের প্রধান দাবি বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আগামী সপ্তাহে কোম্পানির এমডি ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে ১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাণ কোম্পানির সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে প্রাণ কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা বিক্ষোভ বন্ধ করেছেন। প্রাণ কোম্পানি এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। তবে কারখানা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।