গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও গাজীপুর সদর এলাকায় কয়েকটি কারখানায় আজ সোমবার শ্রমিকেরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন। এ সময় তাঁরা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করলে দুই মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। উভয় মহাসড়কে শ্রমিকেরা প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ সময় পুলিশ ও সোনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে অন্তত ৬ জনকে আটক করে। এ ছাড়া কালিয়াকৈর পৃথক এলাকায় তিনটি কারখানা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আটক ব্যক্তিরা হলেন—খোকন মিয়া, সোহাগ মিয়া, নাজমুল মিয়া, উজ্জল হোসেন, শাকিল আহাম্মেদ ও মোবারক হোসেন। তবে তাৎক্ষণিক আটক ব্যক্তিদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার এলাকার মাহমুদ ডেনিম, বক্তারপুর এলাকার ইকু নিট ও কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল রোববার সকালে কাজে যোগদান করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকেরা হঠাৎ করে মজুরি ন্যূনতম সাড়ে ১২ হাজার টাকা, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা, সাধারণ ও বাৎসরিক ছুটিসহ ১২ দফা দাবিতে কারখানার ভেতর বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধে করে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করেন।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পরও ফের আজ সকালে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে এবং বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে কিছু শ্রমিক কারখানা বন্ধ থাকার পরও কারখানার ভেতরে জোড়পূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর করার চেষ্টা করেন।
খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় কারখানার ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ করা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তিনজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের হাত মাইক নিয়ে ঘোষণা দিয়ে শ্রমিকদের কারখানা এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
কারখানার শ্রমিক আব্বাস উদ্দিন বলেন, যে কারখানায় রয়েছি এখানে কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। তাদের সর্বনিম্ন বেতন দেওয়া হয় ৮ হাজার টাকা। এই টাকায় ঘর ভাড়া আর খাওয়া-দাওয়া করে জীবন-যাপন করতে পারছি না। তাই অনেক দিন ধরেই সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসলেও মালিক পক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের কথাও শুনতে চাইনি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার জানান, কারখানা বন্ধ ঘোষণার পরও কিছু শ্রমিক কারখানার ভেতরে জোড়পূর্বক প্রবেশ করায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা কয়েকজনকে আটক করেছে। শ্রমিকেরা কিছু সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছিল। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে সদর উপজেলার বাঘের বাজার গোল্ডেন রিপিট গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড বন্ধ করে আন্দোলন করেছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে ওই কারখানার শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কারখানার অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নেন। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
জানা যায়, সোমবার সকালে শ্রমিকেরা ১২ দফা জানিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান নেয়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ ৮টি দাবি মেনে নেয়। ১২টি দাবি থেকে ৮টি দাবি মেনে নিলেও বাকি চারটি দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে।
গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের বাঘের বাজার জোনের পরিদর্শক সুমন মিয়া জানান, সকাল থেকে শ্রমিকেরা মহাসড়কে আন্দোলন করছেন। এতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহম্মেদ বলেন, ‘কালিয়াকৈর থেকে সেনাবাহিনী ৪ জনকে আটক করেছেন বলে জানতে পেরেছি। আরও আটক থাকতে পারে।’ তারা অন্যান্য জায়গায়ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী শ্রমিকদের ধরার চেষ্টা করছে।