ফুটবলের প্রতি দেশের মানুষের যত আশা ও আবেগ, তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ফুটবল ফেডারেশন। এমন অভিযোগ ও অনুযোগ পুরনো। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বাফুফে সভাপতি হিসেবে দেশের ফুটবল গ্রেট কাজী সালাহউদ্দীন দায়িত্ব পালন করলেও দিনশেষে বাংলাদেশের ফুটবল বৈশ্বিক পর্যায়ে সফলতার মুখ দেখেনি। ধরা দেয়নি দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব তথা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। এশিয়া কিংবা বিশ্ব ফুটবলে জায়গা নেওয়া তো বহুদূরের গন্তব্য হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে অবশেষে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দীন আসন্ন বাফুফে নির্বাচনে সভাপতির পদে প্রার্থী হিসাবে থাকছেন না, তেমন ঘোষণা দিয়েছেন।
সকলেই অবগত যে, ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার অধীনেই বা তত্ত্বাবধানে তাবৎ বিশ্বের দেশগুলোর ফুটবল ফেডারেশন পরিচালিত হয়ে আসছে। সেখানে ফুটবল ফেডারেশনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করার কোন সুযোগ নেই। যদিও অনেকেই মনে করেন দেশের ফুটবল ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে।
কাজী সালাহউদ্দীনের সভাপতি প্রার্থী না হওয়ার কারণে এখন কে হবেন ফুটবলের ত্রাণকর্তা, তা নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। বাংলাদেশের ফুটবল পিছিয়ে গেলেও জাতীয় দলে খেলোয়াড়দের মান যতেষ্ঠ ভালো মনে করেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা। মোরসালিন কিংবা রাকিবেরাও দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দেশগুলোর খেলার মানের বিচারে বাংলাদেশ ঠিক এখনো সুবিধা করতে পারছে না।
দেশের তৃণমূল ফুটবল ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেক ফুটবল বোদ্ধা। বাফুফে সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটো সব সময়ে বলে আসছেন যে, ‘আমাদের জেলা ভিত্তিক লীগ, শেরে বাংলা আন্তঃজেলা ভিত্তিক লীগ, বয়স ভিত্তিক লীগ, আন্ত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের নিয়মিত আসর না হওয়াতে ফুটবলের প্রসার হয়নি।’
তরফদার রুহুল আমিন, সাইফ স্পোর্টিং নামের একটি ক্লাব করেছিলেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবলকে বদলানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে যখন কাজী সালাহউদ্দীন আগামী নির্বাচনে আর সভাপতির পদে নির্বাচন করবেন না বলে ঘোষণা রাখেন, ঠিক তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ তারকা একটি হোটেলকে ভেন্যু করে সাবেক গোলরক্ষক আমিনুল হকের প্রকাশ্য উপস্থিতি ও সমর্থনে তরফদার রুহুল আমিন ২৬ অক্টোবরের নির্বাচনে বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন, তা জানিয়ে দেন।
অন্যদিকে ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি তাবিথ আওয়ালও সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘বাফুফে নির্বাচনে আমি সভাপতি নির্বাচন করতে আগ্রহী। ফুটবল সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চাই। এটা আসলে আনুষ্ঠানিকতা হবে তখন যখন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করব।’
বাফুফের সহ-সভাপতি থাকা অবস্থায় বেশ ভালো কাজ করেছিলেন তাবিথ। জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান না হয়েও তাবিথ ফুটবলের জন্য অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু তাবিথ কোনো বিষয়ে কখনো মুখ খুলতেন না। নিজের প্রচার করতেন না।
ফুটবলের স্বার্থ বিবেচনা করতে হলে আসন্ন ফুটবল ফেডারেশন নির্বাচনের জন্য সভাপতি হিসাবে বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ও ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান কথাও বলেন কেউ কেউ। যদিও এখনো সভাপতি পদে নির্বাচন করার কোনো ঘোষণা দেননি কিংস প্রধান।তবে পেশাদারিত্বের প্রশ্নে, দায়বদ্ধতার প্রশ্নে ইমরুল হাসানের ওপর ভরসা রাখার সুযোগ আছে বলে মনে করে দেশের ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকে।