Topজাতীয়

শেরপুরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশ মানুষের কোনো কাজ নেই

শেরপুর জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশ মানুষের স্থায়ী কোনো কাজ নেই। যারা কাজ করেন তাদের ৬৫ শতাংশই কৃষিজীবী। তবে একেবারেই কাজ না করে বেকার থাকা মানুষের সংখ্যা এই জাতিগোষ্ঠীতে একেবারেই কম।

সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘শেরপুর জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের আর্থসামাজিক অবস্থা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্যুরোর সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

জেলাটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ৩৬ শতাংশই কোনদিন স্কুলে যায়নি বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাছাড়া এই জনগোষ্ঠীর ২১ শতাংশের কম মানুষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিবিএস।

বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
আয়োজক সংস্থার উপপরিচালক আশিকা শারমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মফিদুর রহমান।

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরে ব্যুরোর উপপরিচালক ফারহানা সুলতানা বলেন, শেরপুরের সাবেক জেলা প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক আবেদনের প্রেক্ষিতে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে।

জরিপে দেখা যায়, শেরপুর জেলার সদর, ঝিনাইগাতী, নকলা, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ১৫ লাখ ১ হাজার ৮৫৩ জন। এর মধ্যে জরিপে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা ২০ হাজার ৮৪০ জন।

জেলাটিতে গারো, কোচ, বর্মণ, হাজং, ডালু, হুদি, মসুর, মার্মা, ম্রো, চাক, মাহালীসহ প্রায় ১৬টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি গারো, এরপর রয়েছে বর্মণ, কোচ, হুদি ও হাজং।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা নালিতাবাড়ীতে সবচেয়ে বেশি। তাদের সংখ্যা ৮ হাজার ১১১ জন। এরপর রয়েছে ঝিনাইগাতীতে (৬ হাজার ৯৩৮ জন), শ্রীবরদীতে (৩ হাজার ৪৭৬ জন), সদরে (১ হাজার ৫৩১ জন) এবং নকলায় সবচেয়ে কম ৭৮৪ জন।

এসব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পুরুষপ্রধান পরিবারের সংখ্যা ৭৩ দশমিক ২৭ এবং নারীপ্রধান পরিবার ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

শেরপুরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলগামী মানুষের সংখ্যা মাত্র ২০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। শিক্ষায় হাজংরা সবচেয়ে এগিয়ে। তাদের মধ্যে শিক্ষার হার ৭৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। এরপর গারোদের শিক্ষার হার ৬৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর জেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ উচ্চশিক্ষা (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) পর্যায়ে অধ্যয়ন করছে।

শেরপুরের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ নিজের বাড়িতে বসবাস করেন। ভাড়া বাড়িতে থাকেন মাত্র ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তাদের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ জাতীয় গ্রিডের আওতায় বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা পান। অন্যরা সোলার বা অন্য উৎস ব্যবহার করেন। নিরাপদ সুপেয় পানির আওতায় রয়েছে ৯৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানুষ। উন্নত শৌচাগার ব্যবহার করেন ৮৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে কর্মসংস্থান আছে ৫১ দশমিক ৮৪ শতাংশের।

আলোচনায় প্রধান অতিথি মো. মাহবুব হোসেন বলেন, এই জরিপ থেকে জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অবস্থা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। এই জরিপকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ধরে পরে সারা দেশের জেলাগুলোতে এমন জরিপ করা যেতে পারে।

বিশেষ অতিথি মো. মফিদুর রহমান বলেন, সমাজের অনেক বিষয় আছে, যা পরিসংখ্যানের মধ্য দিয়ে তুলে আনা হলে প্রকৃত অবস্থা জানা যায়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন জেলায় সাংস্কৃতিক জরিপের পরিকল্পনা করেছে বলে তিনি জানান।

সভাপতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, দেশের তিন পার্বত্য জেলায় এমন জরিপ করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। এর প্রক্রিয়া চলছে।

নিউজ ডেস্ক:

Leave a Reply