সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর আলেপ্পো, ইদলিব ও হামায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণের মুখে শুরুতে পিছু হটলেও পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। তবে ‘মিলিটারি অপারেশন কমান্ড’ নামের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। বিদ্রোহীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ বলেছেন, মিত্র রাশিয়া ও ইরানকে নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে লড়বে সরকারি বাহিনী।
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের আক্রমণ শুরু হয় গত বুধবার। তারা এরপর আলেপ্পোর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বিদ্রোহীরা মূলত একটি জোট গঠন করে এ আক্রমণ করেছে। এ জোটের নাম মিলিটারি অপারেশন কমান্ড। তারা ইতিমধ্যে আলেপ্পোর বিমানবন্দরসহ বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বিদ্রোহের নেতৃত্বে রয়েছে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। সংগঠনটি সিরিয়ায় সাবেক আল–কায়েদার সমর্থনপুষ্ট। এটি আল-নুসরা নামেও পরিচিত। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত কয়েকটি গ্রুপ। বিদ্রোহী গ্রুপে আছে তুরস্কভিত্তিক ফ্রি সিরিয়ান আর্মি, কুর্দি যোদ্ধাদের সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের মতো সশস্ত্র গ্রুপ। এ গ্রুপগুলো তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা আলেপ্পোর পূর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইদলিব বিদ্রোহী জোটের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তারা হামার দিকেও এগোচ্ছে। বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে আসাদ সরকারের বাহিনী তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারছে না। সিরিয়া সরকারের সমর্থক রাশিয়া ও ইরান নিজ দেশের সংঘাত নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকায় সিরিয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে গত আট বছরের মধ্যে প্রেসিডেন্ট আসাদের সরকার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা এটি।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখছে। তারা আসাদ সরকারকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়ে যাবে। ইরানের পক্ষ থেকেও একই রকম ঘোষণা এসেছে। ইতিমধ্যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে যৌথভাবে বিমান হামলা শুরু করেছে সিরিয়া ও তাদের মিত্র রাশিয়া। ইরাক থেকে ইরান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীও সিরিয়ার বাহিনীকে সহায়তায় যুক্ত হচ্ছে। গত রোববার দেশটির উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও রাশিয়ার বিমান হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। রুশ সংবাদমাধ্যম তাস রাশিয়ার হামলা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
লড়াই নিয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ বলেন, সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রাখতে সিরিয়া প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে। সন্ত্রাসীদের আক্রমণ যত বড়ই হোক না কেন, মিত্রদের সহায়তায় সিরিয়া এ প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম। এদিকে সিরিয়ার বিরোধী নেতা হাদি আল-বাহরি গতকাল সোমবার ইস্তাম্বুল থেকে বলেছেন, সিরিয়া সরকার জাতিসংঘের প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সমাধানে রাজি না হওয়া পর্যন্ত বিদ্রোহীরা লড়াই চালিয়ে যাবে।
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের এ হামলা দেশটির দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধ উসকে দিয়েছে। এ যুদ্ধে ইতিমধ্যে ৩ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং ৬০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের অবস্থান
সিরিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকা সংঘাত পরিস্থিতি নিয়ে রোববার ফোনালাপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। একই দিন একটি যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে সিরিয়ায় যুদ্ধ উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানানো হয়েছে।