‘এই মিলনায়তনে এবং মিলনায়তনের বাইরে যে-যেখানে বসে আমাদের এই অনুষ্ঠান দেখছেন, সবাইকে সাদর সম্ভাষণ।’ এরপর মিলনায়তনের দর্শকের করতালি। করতালি শেষে আবারও উপস্থাপকের বক্তব্য, ‘প্রীতি নিন, শুভেচ্ছা নিন।’
হ্যা বলা হচ্ছে দেশ সেরা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেতের কথা। নব্বই দশক থেকে শুরু করে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে যিনি তার কথার জাদুতে মুগ্ধ করছেন দর্শকদের। উপস্থাপনাও একটি শিল্প হতে পারে তা তিনি দক্ষতার সঙ্গে প্রমাণ করেছেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রাণোচ্ছল এ ব্যক্তিত্বের আজ জন্মদিন।
১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর বরিশালে জন্ম গ্রহন করেছেন হানিফ সংকেত। জীবনের ৬৫টি বসন্ত পেরিয়ে ৬৬ বছরেও যেন এখনও তরুণই রয়ে গেছেন তিনি।
হানিফ সংকেত একাধারে উপস্থাপক, পরিচালক, লেখক ও প্রযোজক। ১৯৮৯ সালে তিনি শুরু করেন ‘ইত্যাদি’উপস্থাপনা। এটির রচয়িতা এবং পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন তিনি। ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিলেও প্রয়াত ফজলে লোহানীর ‘যদি কিছু মনে না করেন’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে প্রথম খ্যাতি লাভ করেন তিনি।
‘ইত্যাদি’তে হানিফ সংকেত তার উপস্থাপনায় কেবল হাস্যরসকে প্রধান্য দেন না। এর মাধ্যমে সমাজের নানা প্রচলিত অসঙ্গতির বিরুদ্ধে জোরালো কণ্ঠ রাখেন হানিফ সংকেত। অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বে সমসাময়িক নিন্দিত ঘটনার বর্ণনা ও বিরোধিতা থাকে কিছুটা রম্য হলেও নজর কাড়ে সবার।
নিজের কাজের বিষয়ে খুবই যত্নশীল হানিফ সংকেত। নাটক পরিচালনাতেও নিজের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন অনেক। তার পরিচালিত জনপ্রিয় নাটকের মধ্যে ‘আয় ফিরে তোর প্রাণের বারান্দায়’, ‘দুর্ঘটনা’, ‘তোষামোদে খোশ আমোদে’, ‘কিংকর্তব্য’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘শেষে এসে অবশেষে’ উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন হানিফ সংকেত। বেশ কয়েকটি ব্যঙ্গ ও রম্য রচনা লিখেছেন তিনি। তার মধ্যে ‘চৌচাপটে’, ‘এপিঠ ওপিঠ’, ‘ধন্যবাদ, ‘অকান্ড কান্ড, ‘খবরে প্রকাশ’, ‘ফুলের মতো পবিত্র’, ‘প্রতি ও ইতি, ‘আটখানার পাটখানা’ অন্যতম।
এছাড়া উপস্থাপনার পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন হানিফ সংকেত। এছাড়া ‘প্রথম প্রেম’ নামে একটি সিনেমায় ‘তু তু তু তারা, মর্জিনার বাপ মার্কা মারা’ শিরোনামে একটি গানও গেয়েছেন তিনি।
গুণী এই ব্যক্তিত্ব ২০১০ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’ পেয়েছেন। পেয়েছেন ‘জাতীয় পরিবেশ পদক’ এবং ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’সহ দেশি-বিদেশি অনেক সম্মাননা।