সম্প্রতি প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলে বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা। এই সময় বৈষম্যহীন ফল প্রকাশের দাবি জানান তারা।
রোববার (২০ অক্টোবর) সকালে তারা প্রথমে শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হন। পড়ে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের সামনে আসে শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রধান ফটকের সামনে তাদেরকে আটকে দিলে, সেখানেই বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা ৷ একপর্যায়ে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া, চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটও ভেঙে ফেলেন তারা৷
এ সময় আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীরা জানান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৭টি পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু সিলেট শিক্ষা বোর্ডে মাত্র দুটি পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ণ করা হয়নি। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ভুলের কারণে মার্কিংয়েও ভুল হয়েছে। ফলে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তারা। এই সময় অবিলম্বে পরীক্ষার ফল পুনর্মূল্যায়ন না করা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।
এদিকে আন্দোলনকারীরা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে তারা দেখা করতে চাইলে গেটে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা গেট ভেঙে বোর্ডের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের ওপর হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে বোর্ড প্রাঙ্গণেই তারা বিক্ষোভ করছেন।
তবে তাদেরই বিরুদ্ধে ভাংচুরের অভিযোগ তুলে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কারণে সন্ধ্যা ৬টাতেও বোর্ড কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে উত্তীর্ণ আলিফ আহমেদ বলেন, সিলেট বোর্ডের শিক্ষার্থীরা একটি পরীক্ষা দিয়েছে, আর আমরা সাতটি পরীক্ষা দিয়েও আমাদের আশানুরূপ রেজাল্ট আসেনি। আমরা আমাদের পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য আসলে গেটে পুলিশ বাধা দেয়।
তিনি বলেন, একপর্যায়ে গেট ভেঙে আমরা বোর্ড চেয়ারম্যানের রুমে গেলে সেখানে কয়েকজন আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে কয়েকজন রক্তাক্ত হয়েছেন।
পরীক্ষার খাতা পুনরায় মূল্যায়ন করা না হলে এই আন্দোলন চলবে জানিয়ে আলিফ বলেন, আমাদের পরীক্ষার খাতা ঠিকমতো দেখা হয়নি। তারা অ্যাপসের মাধ্যমে আন্দাজ করে আমাদের রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে। আমাদের পরীক্ষার খাতা পুনরায় মূল্যায়ন করা না হলে এই আন্দোলন চলবে।
হামলার ঘটনার বর্ণনায় এক আন্দোলনকারী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বোর্ডে এসেছিলাম। আমাদেরকে বাধা দেওয়ায় আমরা জোর করে ঢুকেছি। তারপর বোর্ডের ভেতরের কিছু লোক আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে।
চকবাজার থানার ওসি রেজাউল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা চেয়ারম্যানের কক্ষে যেতে চাইলে সেখানকার লোকজন তাদেরকে বাধা দেয়। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি রয়েছে, সে কারণে বাধা দেওয়ায় ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন আহতের খবর শুনেছি।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সন্ধ্যা ৬টায় বলেন, কিছু ছেলেমেয়ে অটোপাসের দাবিতে এসে আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে, এখনও আমরা অফিসে অবরুদ্ধ হয়ে আছি।
তার ভাষ্য, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাই তার কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করেছে এবং ভাংচুর করেছে।
অধ্যাপক তপন বলেন, যারা আন্দোলন করছে, তারা অকৃতকার্য হয়েছে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব সাবজেক্টে পরীক্ষা হয়েছে- তার উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করে ফলাফল দিয়েছি। এখন তারা সেটি মানবে না। তারা চাচ্ছে সবগুলো সাবজেক্ট ম্যাপিং করে নতুন করে ফলাফল দিতে। এটা কীভাবে সম্ভব?
বোর্ড চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তারা বুঝতেছে না, সরছেও না। এখানে সেনাবাহিনী আসছে, পুলিশও আসছে। তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।