গত ৫ আগস্টের পর মাত্র কয়েকদিনেই ভোল পাল্টাচ্ছেন মাদারীপুরের শিবচর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ও নেতারা। শিবচরে বিএনপির এক সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের একঝাঁক নেতা বিএনপিতে যোগ দেন। এ যেন ‘পুনর্বাসন!’ বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের বাদশা ব্যাপারীর বাড়িতে বিএনপির একাংশের এক সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল ব্যাপারী আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা এবং স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরীর খুবই আস্থাভাজন। পুরোদস্তুর একজন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে তিনি বেশ সমাদৃত শিবচরে। পটপরিবর্তনের প্রায় দুই মাসের মধ্যেই তাকে বিএনপির এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকতে দেখে সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরাও।
সোমবার দুপুরে শিবচরের সমাবেশ ও মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার একাধিক মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগের ওই চেয়ারম্যানকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। একইদিন আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে বিএনপিতে যোগদান করানো হয়েছে। এই নিয়ে জেলা জুড়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
জানা গেছে, সভায় বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। নুরুদ্দিন মোল্লাকে স্বাগত জানাতে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোহসেন উদ্দিন সোহেল ব্যাপারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে সভার মঞ্চেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে ওই চেয়ারম্যানকে।
একই অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজীব হাওলাদারকে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করারও খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও একই সঙ্গে এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরো বেশকিছু নেতারও বিএনপিতে যোগদানের খবর পাওয়া গেছে। এতে করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে।
শেখ নূর উদ্দীন নামে এক ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি লতিফ মোল্লার আপন ছোট ভাই কামাল জামান নূরুদ্দীন মোল্লা একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পায়নি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়। এরপরে থেকে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দিতে থাকেন। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শিবচরে তার কোনো কার্যক্রম ছিল না।’
তিনি আরো বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে তিনি হঠাৎ করে প্রকাশ্যে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করে রাজনীতিতে ফিরতে চেষ্টা করছেন। তিনি এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলার ২ জন আসামি ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল ব্যাপারী ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজীব হাওলাদারকে সোমবার দলে নিয়ে বিএনপি কর্মী সমাবেশ করেছেন। এটা দুঃখজনক। এতে করে শিবচরে বিএনপির ওপরে আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ জনগণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে থেকে বিগত ১৭ বছর সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তারা। দিন বদলে এই পরিবর্তন! এটা খুবই লজ্জার!’
এদিকে যোগদান বা সমাবেশে উপস্থিত থাকার বিষয় জানতে সোহেল ব্যাপারী, সজীব হাওলাদারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দিন মোল্লার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন খলিফা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যারা ত্যাগী, আস্থাশীল এমন নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় না করে কিছু দালাল চক্রের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের দলে স্থান দেওয়া হয়েছিল। তারা দলের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। তারা এসেছিল ব্যবসা করতে ব্যবসা শেষ এখন আবার চলে গেছেন। আমাদের দলের নেতা জননেতা নূর-ই আলম চৌধুরী কোনো সাংগঠনিক সম্পাদক বা দলের কারও সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করে তাদের দলে এনছিল। এখন তারা সুযোগ পেয়ে চলে গেছে।’
উপজেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এ কাজগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’