যশোরের মনিরামপুরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আকস্মিক চুলকানি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে মনিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে আক্রান্তদের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
জানা গেছে, মনিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল প্রিয়া বিদ্যালয়ে সমাবেশের পর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছিল। আকস্মিক তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকাতে শুরু করে। একপর্যায়ে চুলকানোর জায়গাটি লাল হয়ে যায়। তার এই অবস্থা দেখে জিম নামে আরেক শিক্ষার্থী এগিয়ে গিয়ে সেই লাল জায়গায় হাত দিতেই তারও (জিম) শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকাতে শুরু করে এবং একই রকম উপসর্গ দেখা দেয়।
এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই বিদ্যালয়ের একই উপস্বর্গ নিয়ে প্রায় অর্ধশত শিশু হাসপাতালে আসে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদার জানান, সমাবেশ শেষে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলাকালে জান্নাতুল প্রিয়া নামের ৪র্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী প্রথমে আক্রান্ত হয়। পরপরই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হলে প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আলাদা করা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন সুমাইয়া জানান, প্রত্যেক শিক্ষার্থীই একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসে। তিনি এটিকে অ্যানাফিল্যাকটিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন। তবে, একইসঙ্গে এত শিক্ষার্থী একই উপসর্গে আক্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক মনে করছেন না তিনি। এ জন্য এই রোগটি নিয়ে তদন্তপূর্বক গবেষণার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, খবর পেয়ে ওই বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না। এ সময় তিনি বিদ্যালয়ের মাঠে গরুবাহী বিপুল গাড়িসহ নানা ধরনের যানবাহন দেখতে পান। শিক্ষার্থীরা ওই যানবাহনে উঠে খেলাধুলা করে। তিনি প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন রোগাগ্রস্ত কোনো পশুবাহী যানবাহনের সংস্পর্শ হতে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
ইউএনও নিশাত তামান্না বলেন, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যানবাহন না রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু মোত্তালেব আলম বলেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) ডা. হুমায়ুন কবীর, সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুল বাশার উমর ফারুক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদার।