সম্প্রতি সময় সংবাদকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এমন তথ্য জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।
তিনি বলেন, ‘এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্য বছরের মতো নয়। সাধারণত প্রতি বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রভাব একেবারেই কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম ঘটছে। আগামী দুই মাসও ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি থাকবে। এমনকি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এর প্রভাব থাকবে।
তিনি জানান, তাদের একটি গবেষণা দল মাঠ পর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব নিয়ে কাজ করেছে। সেখানে প্রায় প্রতিটি এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব ২০ এর ওপরে রয়েছে। কোথাও এমনটা দেখা দিলে ধরে নেয়া হয়, সেই এলাকায় এডিস মশাবাহিত রোগ বিশেষ করে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া হওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে।
এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং সম্প্রতি সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির পানি বিভিন্ন ছোট-বড় পাত্রে কিংবা গর্তে আবারও পানি জমেছে। ফলে এসব পানিতে মা মশাগুলো ডিম পাড়বে। সেখান থেকেই এডিস মশার বিস্তার ঘটবে।’
ড. কবিরুল বাশার মনে করছেন, সমাজে যেহেতু এখনও ডেঙ্গু রোগী রয়েছে এবং এডিস মশার প্রজননেরও সময়টা বাড়ছে, এ কারণে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুরোধে দেশে যে প্রক্রিয়া চলছে, এভাবে কোনোদিনই সম্ভব নয়। এজন্য আমার প্রস্তাবিত একটি মডেল রয়েছে। যা এরইমধ্যে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত প্রস্তাবিত মডেলটি বাস্তবায়ন না হচ্ছে, ততদিন দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বেশ কষ্টসাধ্য বলা যায়।’
বর্তমানে ডেঙ্গুরোধে করণীয় বিষয়ে এই অধ্যাপক বলেন, ‘এই মুহূর্তে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যদি শর্টটার্ম পরিকল্পনার কথা বলি, তাহলে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করাটা জরুরি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর বাড়ির ঠিকানা শনাক্ত করে, তার চারদিকে ফগিংয়ের মাধ্যমে মশার ঘনত্ব কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে ব্রিডিং সোর্স ও লার্ভার ম্যানেজমেন্টও করতে হবে।’
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চারজন মারা গেছেন। একইসময় নতুন করে ১ হাজার ২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬৮ জনে এবং মশাবাহিত রোগটি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৫৪ হাজার ২২৫ জন।
গত বছর দেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের।