বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর, সাড়ে ২০ কিলোমিটার সড়কে ৭ বছর ধরে চলছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ। ২০১২ সালে নেয়া প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০১৬-এ। তবে নানা জটিলতায় সেই কাজ শুরু হয় ২০১৭-তে এসে। দীর্ঘসময় ধরে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সুফলের বদলে যেন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
অবকাঠামোর ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হলেও কবে নাগাদ বাস চলা শুরু করবে তা র্নিদিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউ। এছাড়া ফুটপাতের ওপর স্টেশন নির্মাণ করায় দেখা দিয়েছে নতুন জটিলতা।
প্রায় ২ হাজার ৪শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্প কয়েক দফায় বাড়িয়ে করা হয় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকার। এমন প্রকল্প বিশ্বের আরও দুইশটি দেশে বাস্তবায়ন হলেও এত সময় আর অর্থ লাগেনি কোথাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গলদটা গোড়াতেই ছিল। জনগণ নয়, নিজেদের স্বার্থেই নেয়া হয়েছে এমন প্রকল্প।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, এই প্রকল্প সিক প্রজেক্ট। পরিকল্পনা, নকশা থেকে সব কিছুতেই ব্যক্তি স্বার্থের কথা চিন্তা করা হয়েছে। ফান্ডিং এজেন্সি নিজের ফান্ডের কথা চিন্তা করেছে। করিডোরের ক্যারেক্টারের দিকে চায়নি। যদি করিডোরের ক্যারেক্টারটা দেখতো, তা হলে তারা প্রথমদিনেই বলতো দিজ ইস নট ফর বিআরটিএ।
প্রায় ১৪ বছর লাগিয়ে শেষ হয়েছে অবকাঠামোর ৯৭ ভাগ কাজ। এরপর পরিচালনায় আরও কত সময় যাবে, দ্বায়িত্ব নিয়ে বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিআরটি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মো. মহিউদ্দিন বলেন, যদি আমরা অন টাইমে ডেলিভারি পাই, তাহলে ফেব্রুয়ারি-মার্চের পর অপারেশনে যাওয়া সম্ভব হবে।
এদিকে, পুরোপুরি কাজ শেষ না হওয়ায় কাটছে না ভোগান্তি। বিশেষ করে গাজীপুর চৌরাস্তা সড়কের ওপরেই চলছে ফ্লাইওভার ও স্টেশন নির্মাণের কাজ। এতে যানজট ভোগান্তি আর দূষণে নাকাল এই পথের যাত্রীরা।
গাজীপুরের গাজীপুরা স্টেশনসহ প্রকল্পের কয়েকটি স্টেশনের পিলার ও সিঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে ফুটপাতের ওপর। ফলে ফুটপাত না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত চলাচল করছেন পথচারীরা।
যে সকল জায়গায় স্টেশনের কারণে ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব স্থান সহায়ক প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ করে ফুটপাত সম্প্রসারণের কথা বলছে কর্তৃপক্ষ। যদিও এমন প্রকল্পকে দায় এড়ানোর চেষ্টা বলছেন শামসুল হক।
জানা গেছে, অর্থায়ন সংকট, কাজের ধীরগতি আর নিধারিত সময়ে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় চীনা দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিলের কথা ভাবছে ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি। এতে সংকট আরও বাড়ার শঙ্কা যোগাযোগ বিশেষজ্ঞের।
অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশে টেন্ডারে যাওয়া, নতুন করে টেন্ডার দেয়া, টেন্ডার বাছাই করা— এই প্রক্রিয়াটা আমার মনে হয় সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এটা কালক্ষেপন হবে। প্রকল্পের খরচের আরও মাত্রা বাড়িয়ে দেবে।
২০১৭ সালে শুরু হওয়া বিআরটি প্রকল্প আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করার তাগিদ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে কাজের যে অগ্রগতি সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন সংকটে কাজ চলছে অনেকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে। ফলে ২০২৪ এর ডিসেম্বর তো নয়ই, ২০২৫ এর ডিসেম্বরেও পুরোপুরি চালু হয় কি না তা নিয়েই সন্দিহান অনেকে।