সরকার বদলের পর থেকে দেশের অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানই আত্মগোপনে রয়েছেন।
ফলে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে সেবা থেকে।
বর্তমানে বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।
তার মধ্যে তিন হাজারেরও বেশি ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার আত্মগোপনকারী চেয়ারম্যানদের সরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।
আগামী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সারাদেশের ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে।
যদিও বিগত সরকার পতনের পর মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র,জেলা ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। ২০২১ সালে নূরুল হুদা কমিশন ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করে। আর ১৯৫ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের তফশিল ঘোষণার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে নির্বাচন কমিশন গত ২৪ জুলাই ওই নির্বাচন স্থগিত করে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আইন অনুযায়ী পদত্যাগ করলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ শূন্য হবে। এছাড়া পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কারণে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি বা দ-িত হলে কিংবা পরিষদের স্বার্থপরিপন্থি কাজ করলে সরকার চেয়ারম্যানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারে।
এছাড়া দুর্নীতি, অসদাচরণ বা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধ কিংবা বিনা অনুমতিতে দেশত্যাগের কারণে ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী তাদের অপসারণের সুযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন খোলা থাকলেও অনেক স্থানে পরিষদে যাচ্ছেন না নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।
আর যেসব ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান রয়েছেন সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অতিসম্প্রতি নীলফামারীর ডোমারের পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে শিক্ষার্থীরা তালা ঝুলিয়ে দেয়। সারাদেশের বেশ কিছু জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে মিছিল ও পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচিও চলছে।
সূত্র আরো জানায়, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের সোহাগপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় এক কলেজছাত্র। ওই হত্যা মামলায় মির্জাপুরের পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে। তারপর থেকেই ওই চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে চলে যান। তারা ইউনিয়ন পরিষদে না গিয়ে গোপন স্থান থেকে কাজকর্ম সারছেন। তাছাড়া সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৮ নম্বর কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পালিয়ে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় আন্দোলনের সময় স্থানীয় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হওয়ার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে উপজেলার ছয় চেয়ারম্যান।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ১১টি ইউনিয়নের সব চেয়ারম্যানই মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেণ।
বিগত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাজিতপুরের চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ কারণে চেয়ারম্যানদের কেউ কেউ পলাতক, কেউ কেউ এলাকায় থাকলেও অফিস করছে না।
বরিশালের আগৈলঝাড়ার পাঁচটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সবাই পলাতক। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পালিয়ে আছেন ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
সুনামগঞ্জের ছাতকের কালারুকা ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন।
এদিকে এ ব্যাপারে সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান জানান, কয়েক বছর ধরে এমন সব নির্বাচন হয়েছে, যা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর মানুষ এখন ক্ষোভ দেখাচ্ছে। তাদের অপসারণ চাচ্ছে।
এটা বাস্তবায়ন করা বর্তমান সরকারের দায়িত্ব। অন্যদিকে অতিসম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, জাতীয় থেকে স্থানীয় সরকার সব পর্যায়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে।
দলীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত রাখতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ কর্তৃত্ব, জনবল, আর্থিক সামর্থ্য ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে স্থানীয় জনগণকে প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়। বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা অত্যন্ত প্রকট।