হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় গ্রাহকের শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত ‘নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সোসাইটি সমবায় সমিতির’ তিন কর্মকর্তার পাসপোর্ট পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে উপজেলার তেলিয়াপাড়া রেলস্টেশনের পাশে অবস্থিত ওই এনজিও কার্যালয়টি চারদিন ধরে ঘেরাও করে রেখেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
‘নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সোসাইটি সমবায় সমিতির’ চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন বেলাল, স্ত্রী আমেনা বেগম, ছেলে সায়েম, সালমান ও শ্যালক জালাল উদ্দিন এবং মাসুদ মিয়া কার্যালয়ের ভেতরে আবাসিক ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাসিম তাদের মধ্য থেকে তিনজনের পাসপোর্ট পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
আন্দোলনরত গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রায় ১৫ বছর আগে ‘নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সোসাইটি সমবায় সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধুমাত্র সমিতির সদস্যদের মধ্যে ঋণ বিতরণের কথা থাকলেও তারা সেটা না করে চা বাগান শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করতে থাকেন। মোটা অংকের মুনাফার লোভ দেখিয়ে নানা শ্রেণিপেশার লোকের কাছ থেকে শতকোটি টাকা আমানতও সঞ্চয় করেছেন।
এসব টাকা লেনদেনের নেপথ্যে ছিলেন নিশানের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন বেলাল, তার স্ত্রী আমেনা বেগম, ছেলে সায়েম, সালমান ও শ্যালক জালাল উদ্দিন এবং মাসুদ মিয়া।
পরিবারের সদস্যরাই নিশান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সোসাইটি সমবায় সমিতির কর্মকর্তা পদে আছেন। মানুষের আমানতের টাকায় মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর তেমুনিয়ায় নিশান টাওয়ার, নিশান অটো ইট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও মোটরসাইকেল শোরুমসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তারা। সমিতির কর্মকর্তাদের বিলাশবহুল গাড়িও ব্যবহার করতে দেখা যায়।
এদিকে প্রথম কয়েক বছর আমানতকারীদের মোটা অংকের মুনাফা দেওয়ায় এনজিওর প্রতি লোকজনের আগ্রহ বাড়ে। অনেকে সহায়-সম্বল বিক্রি করেও নিশানে টাকা জমা করেছেন। কিন্তু গত এক বছর ধরে অর্থসংকট দেখিয়ে সুদ ও আসল কোনোটাই দিচ্ছেন না তারা।
পরে টাকা ফিরে পেতে গত শুক্রবার থেকে এনজিও কার্যালয়ের সামনে কয়েকশ গ্রাহক অবস্থান নেন। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা পর্যন্ত কার্যালয়টি ঘেরাও করা ছিল।
সুরমা গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, আনোয়ার গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সব জমি বিক্রি করে নিশানে টাকা জমা করেছেন তিনি। এখন সেই টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে ইউএনও জাহিদ বিন কাসিম বাংলানিউজকে বলেন, গ্রাহকরা যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেন, সেজন্য পুলিশি পাহারা রয়েছে। তারা চাইলে মামলাও করতে পারেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাধান করতে হলে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, অভিযুক্তরা গ্রাহকের টাকা শোধ না করে যাতে বিদেশে না যেতে পারেন, সেজন্য তিনজনের পাসপোর্ট মাধবপুর থানা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। বাকিদের পাসপোর্টও শিগগির থানায় জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল-মামুন বাংলানিউজকে বলেন, অভিযুক্তরা যাতে আক্রমণের শিকার না হন, সেজন্য কয়েকজন পুলিশ পাহারায় রয়েছে।