লেবাননে জাতিসংঘের প্রধান ফটকে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দুটি ট্যাংক দিয়ে হামলা চালিয়ে সংস্থাটির প্রধান ফটক গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে লেবাননে নিয়োজিত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) জানিয়েছে, রোববার সকালে ইসরায়েলি সেনাদের ট্যাংক তাদের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেছে। এ সময় তারা দেশটির সীমান্তবর্তী রাময়াহ এলাকার একটি ক্যাম্পের প্রধান ফটক ধ্বংস করে দিয়েছে। এ ছাড়া তারা সব ধরনের বাতি বন্ধ করার জন্য শান্তিরক্ষীদের চাপ দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রায় দুই ঘণ্টা পরে ইসরায়েলি সেনারা শান্তিরক্ষীদের অবস্থানের কাছাকাছি এলাকায় বিস্ফোরক ফেলে গেছে। ফলে ধোঁয়ার কারণে ১৫ শান্তিরক্ষী ত্বকের জ্বালা এবং শ্বাসকষ্টের পীড়ায় ভুগেছেন।
অন্যদিকে আইডিএফ জানিয়েছে, তারা ইউএনআইএফআইএলে ট্যাংকবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আহত সেনাদের সরিয়ে নিতে সেখানে প্রবেশ করেছে। তারা জানিয়েছে, হামলায় ইসরায়েলের দুই সেনা গুরুতর আহত হয়েছে। এ ছাড়া বাকিদের অবস্থা গুরুতর নয়।
তারা জানিয়েছে, আহত সেনাদের সরিয়ে নিতে দুটি ট্যাংক পেছনের দিকে পরিচালিত হয়েছে। কেননা গুলি করার হুমকির কারণে তারা সামনে আগাতে পারেনি। ফলে ইউএনআইএফআইএলের অবস্থানের দিকে কয়েক মিটার তারা চলে এসেছে।
এদিকে শান্তিরক্ষীদের ওপর যে কোনো হামলা যুদ্ধাপরাধ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ইউএনআইএফআইএল ইউএনআইএফআইএল। এ ছাড়া শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনসহ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের এক বিবৃতি উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য। গত এক বছরে বিশ্বে অনেক বিপদের মুহূর্ত এসেছে। তবে এবারেরটি সবচেয়ে ভয়াবহ। গত কয়েক দিন আগে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। এরপর লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। জবাবে ইরান ইসরায়েলে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। এরপর তেহরানে পাল্টা হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে তেলআবিব।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর পক্ষ থেকে সব পক্ষকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কারণে মূলত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় লেবাননের বৈরুতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালায়। সেখানে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অনেক আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। মাটিতে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। আকাশ ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। পুরো লেবানন থেকে ওই দৃশ্য দেখা যায়। এ হামলা হয় মাটির নিচে থাকা হিজবুল্লাহর বাংকার লক্ষ্য করে। এ হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরায়েলের এক সপ্তাহ ধরে চালানো হামলায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবর আসে।
তারও এক সপ্তাহ আগে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে লক্ষ্য করে পর পর অসংখ্য ওয়াকিটকি এবং পেজার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে কমপক্ষে ৩২ জন নিহত এবং তিন হাজার জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।